দোয়েল পাখি
লেখা ও ছবি- মৃন্ময়
চক্রবর্তী
দোয়েল পাখি নামটির সঙ্গে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই পরিচিত। দোয়েল
পাখি দেখেনি এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলা
থেকেই কম বেশি পরিচিত আমরা এই পাখির সঙ্গে, তবে
আমি একটু অন্য কিছুই লিখব যেটা হয়ত অনেকেই জানেন না।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis। ইংরেজিতে এটি
Oriental-magpie Robin নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, এই পাখির বাংলা নামটির সঙ্গে ফরাসী ও ওলন্দাজ নামের মিল আছে। ফরাসী ভাষায় একে বলা হয় Shama dayal এবং ওলন্দাজ ভাষায় একে বলা হয় Dayallijster। এটি একটি চড়াই জাতিও পাখি, আমাদের বাংলার প্রাই সব অঞ্চলের সর্বত্রই দোয়েল দেখা যায়। এই পাখি বেশিরভাগ
সময় গাছের ডালে বা মাটিতে লাফিয়ে বেড়ায় খাবারের খোঁজে।
গ্রামাঞ্চলে খুব ভোরে এদের কলকাকলি শোনা যায়। দোয়েল গ্রামের সৌন্দর্য আরো অপরূপ করে তোলে। এই
পাখি শুধু বাংলা তথা ভারতেই নয়; বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চিন, মালয়েশিয়া
নানান জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।
নানান সুরে ডাকতে সক্ষম
এই পাখিটির প্রধান খাদ্যই
হল কীট পতঙ্গ, ছোট ছোট শুঁও পোকা। কখনো কখনো সন্ধ্যার আগে আগে এরা খাবারের খোঁজে বের হয়। পুরুষ পাখিটিকে আকৃষ্ট করার জন্য মিষ্টি সুরে ডাকাডাকি সুরু
করে স্ত্রী পাখিটি।এরা আকারে ১৫-২০ সেন্টিমিটার বা ৭ - ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর লম্বা লেজ আছে যা অধিকাংশ সময় খাড়া করে রাখে। পুরুষ দোয়েলের শরীরের উপরিভাগ ও গলার নিচে কালো রঙের, পেট সাদা। ডানার দুই পাশে সাদা রঙের প্যাচ আছে। স্ত্রী দোয়েলের উপরিভাগ ও গলার নিচে ছাই-রঙা হয়। পেটের অংশ পুরুষ দোয়েলের মত উজ্জ্বল নয়, বরং কিছুটা ফিকে সাদা।কিন্তু দুজনেই দেখতে ভারি
সুন্দর।
![]() |
PHOTO 1 : ORIENTAL-MAGPIE ROBIN |
দক্ষিণ এশিয়ায় দোয়েলের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুলাই; আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জানুয়ারি থেকে জুলাই। প্রজনন সময় পুরুষ দোয়েলের শরীরের রঙ উজ্জ্বলতর হয়। গাছের ডালে বসে স্ত্রী দোয়েলকে আকর্ষণের জন্য নানারকম সুরে ডাকাডাকি করে। ডিম দেয়ার এক সপ্তাহ আগে এরা গাছের কোটরে বা ছাদের কার্ণিশে বাসা বানায়। সাধারণত ৪ থেকে ৫টি ডিম দেয়। ডিমের রং ফিকে নীলচে-সবুজ, তার উপর বাদামী ছোপ থাকে। স্ত্রী দোয়েল ডিমে তা দেয়; ৮ থেকে ১৪ দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রজননকালে পুরুষ দোয়েল আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তখন বাসার আশেপাশে অন্য পাখিদের আসতে দেয়না।
এ পাখি যেমন মিষ্টি তার ডাক তেমন মিষ্টি এর রুপ। বাংলা সাহিত্যে
ও গল্পে অনেক লেখকের লেখায় এই পাখির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও বাংলাদেশের
মুদ্রাতেও দোয়েল পাখি ছবি দেখতে পাওয়া যায়, শুধু তাই নয় বাংলাদেশের জাতীয় পাখি (National Bird) হল দোয়েল (Oriental-magpie
Robin), এবং এইপাখির নাম অনুযায়ী একটি জায়গা আছে যেটি দোয়েল চত্বর
নামে পরিচিতও।
Information Help : www.wikipedia.com