শিকারী পাখী
লেখা ও ছবি – মৃন্ময় চক্রবর্ত্তী
Black Kite বা সহজ বাংলা ভাষায় বললে বলা হয় চিল। ছোটবেলায় জানতাম চিল আকাশের অনেক উঁচুতে ওড়ে, আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার শিকারের উপর নজর রাখে। তখন ভাবিনি এই শিকারী পাখিটিকে এত কাছ থেকে দেখব এবং তার চিত্র সংগ্রহ করতে পারব। সবই বলতে পারেন এই ফটোগ্রাফি-এর নেশার জন্য সম্ভব হয়েছে।
সময় পেলেই, দিনের অবসর সময়টুকু ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়ি পাখির ছবি তুলতে। এমনই চিত্র প্রেমী মানুষ তাপস কুমার দত্ত মহাশয়, মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী এবং আমি বেরোই বাড়ির আসে পাশে। তখন চোখে পরে আকাশ থেকে নেমে আসা দুইজোড়া Black Kite । প্রথমত, এত কাছ থেকে দেখব তা ভাবতে পারিনি ও দ্বিতীয়ত, কাছ থেকে পেয়েও তার চিত্র সংগ্রহ করতে পারব।
![]() |
PHOTO 1 : BLACK KITE |
Black Kite মুলত Accipitridae (আক্সিপিট্রিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Milvus গণের প্রজাতির একটি পাখী। সাঁওতালি ভাষায় একে “কুরিত” আবার অসমিয়া ভাসায় একে “চিলানা” বলে থাকে। এদের অনেক রকম ভাগ থাকায় সহজে একে চেনার উপায় হল তার লম্বা চেরা কালছে-বাদামি লেজ। আকারে কমবেশি ৬১ সেমি, ডানা ৪৩.৮ সেমি, ঠোঁট ৩.৬ সেমি, পা ৫.২ সেমি, লেজ ২৬.৫ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরষ চিলের ওজন ৬৩০-৯৩০ গ্রাম এবং স্ত্রী চিলের ক্ষেত্রে ৭৫০-৯৪০ গ্রাম হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুশ চিলের চেহারা প্রায় অভিন্ন, তবে স্ত্রী পাখিটি আকারে বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দেহ গাঢ় লালচে বাদামি ও পিঠ লালচে-বাদামি হয়। ঠোঁট স্লেট-কালো। এরা ভোর হলে ঝাঁক বেধে আকাশে গোল করে ঘোরে ও শিকারের সন্ধান করে। চিল খুবই সুযোগ সন্ধানী খাদক। সাধারণত এরা আহত, মৃত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখী, স্তন্নপায়ী জাতীয় প্রাণী যেমন ব্যাঙ, সাপ ও পোকামাকড় খায়। অন্য পাখী বা প্রাণীর খাবার ছিনিয়ে খেতে এরা ওস্তাদ। প্রায় শকুনের সঙ্গে মিলে উচ্ছিষ্ট পশুর মৃত দেহ খায়। খাবারের জন্য এরা একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে উড়ে বেড়ায়। তা ছাড়াও ডানার তুলনায় শরীর হাল্কা হওয়ার অনেক্ষণ ডানা না ঝাপটে আকাশে বিচরণ করতে পারে। খাবারের খোঁজ পেলে ডানা গুঁটিয়ে ফেলে ও ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে। মার্চ থেকে মে মাস হল এদের প্রজনন সময়। এই সময় পুরুষ চিল আকাশে গোল করে উড়তে থাকে ও হঠাৎ স্ত্রী চিলের পিঠে নেবে আসে। স্থানভেদে এদের প্রজননের বিভিন্নতা লক্ষণীয়। পুরনো নোংরা কাগজ প্লাস্টিকের বস্তু কাঠি ডালপালা দিয়ে এলোমেলো বাসা বানায় কোনো এক বড় গাছের উঁচু ডালে বা কোনো উঁচু বাড়ির জলের ট্যাঙ্কে ৫-৩০ মিটার উচ্চতায়। বাসায় এরা ডিম পাড়ে ২-৪টি যার মাপ ৫.৩ - ৪.৩ সেমি হয়। ৩০ থেকে ৩৪ দিনে ছানা বেরোয়, যাদের জীবনের প্রথম প্রায় দুটো মাস বাসায় কাটাতে হয় এবং স্বভাবতই তখন লালন-পালনের দায়িত্ব পুরুষ ও স্ত্রী চিল দুইয়েরই। এই ছানা মাত্র দুবছর বয়সেই প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে।
![]() |
PHOTO 2 : BLACK KITE |
বিগত কয়েক বছরে এদের হ্রাস-বৃদ্ধি ব্যাপারে বিষদে জানা যায়নি, তাই I.U.C.N (INTERNATIONAL UNION
OF CONSERVATION & NATURE & NATURAL RESOURCES : আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ) এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে।
KHUB BHALO
ReplyDelete