চেনা শহরে অচেনা পাখি
লেখা ও ছবি – মৃন্ময় চক্রবর্ত্তী
কলকাতার কাছেই উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি জায়গা হালিশহর। হয়ত অনেকেই পরিচিত এই নামটির সঙ্গে, কিন্তু যারা পরিচিত নন তাদেরকে জানিয়ে রাখি এই স্থানটি হল সাধক রামপ্রসাদের জন্মস্থান। যাইহোক মূল কথাই ফিরে আসি।
এমনই শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, প্রায় সময় পেলেই, আমি, আমার এক শিক্ষক ও স্থানীয় পক্ষীবিদ শ্রী তাপস কুমার দত্ত, রথিন্দ্র চন্দ্র, আমার দাদা মৃগাঙ্ক চক্রবর্ত্তী এবং আমার দুই বন্ধু দীপ হাজরা ও সুমন সরকার বেরিয়ে পড়ি পাখির ছবি সংগ্রহ করতে আমাদের এই লোকালয়ে; প্রায় প্রতিদিনের ন্যয়। তেমনই এই শীতের সকালে, দিনটি ছিল বোধ করি ২৭শে ডিসেম্বর, ২০১৫; পাখির চিত্র লেন্সবন্দি করতে বেরোয়। এদিক সেদিক ঘুরে হঠাৎই দেখতে পাই এক হলদে রঙের খানিকটা চড়াই এর মত পাখি। কিছুটা সামনে যেতেই বুঝতে পারি এটি এক অন্য পাখি; অন্য পাখি সেই বিষয়টি পরে বুঝতে পারি। আর অপেক্ষা নয় ছুটি নতুন পাখির ছবি সংগ্রহ করতে।
এই নতুন পাখিটি আসলে Black Headed Bunting নামেই পরিচিত, যাকে বাংলায় বলে সোনা পাখি। এছাড়াও এই প্রজাতির আরও অন্য পাখি আছে, তবে এটিকেই শেষ দেখা গেছে ডানকুনিতে পাঁচ বছর আগে, তারপর এই হালিশহরে। ২০১৫ থেকে ২০১৮-র জানুয়ারী মাস পর্যন্ত হালিশহরে প্রত্যেক শীতে দেখা মিলেছে। এছাড়াও বেশ কিছুদিন বর্ধমানের বরসুলে দেখতে পাওয়া গেছে।
কালো কেশ নিশান (Emberiza melanocephala) নিশান পরিবারের Emberizidac একটি চড়াই জাতীয় পক্ষীবিশেষ যা প্রায় ১৬ থেকে ১৮ cm বড় হয়। এর প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে খুব ভাল ভাবে চেনা যায় এর পেটের দিকটা হলদে রঙের ও পিঠের দিকটা বাদামী। স্ত্রী বান্টিং ও পুরুষ বান্টিং চেনার সবচেয়ে সহজ উপায়ে হল, পুরুষ বান্টিং এর মাথাটা কালো কিন্তু স্ত্রী বান্টিং এর মাথা কালো নয়। প্রধানত শীতকালে বসবাসের পরিবর্তন এর উদ্দেশ্যে স্থানান্তরের জন্য আসে ভারতে এবং এদের এক আশ্চর্য ক্ষমতা একই সঙ্গে ৭০০০ km উড়তে পারে। আর অন্যান্যদের মত এর পাখিতি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে শস্য ও বীজের সন্ধানে। এদের প্রজনন স্থল দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং পূর্ব ইরানে। এটি ৪-৫টি ডিম পাড়ে একই সঙ্গে এবং ১৩-১৫ দিন লাগে ‘তা’ দিতে এবং ডিম ফুটে শিশু বান্টিং এর জন্ম হতে।
এত মধুর এদের ডাক যা শুনতে “পিয়িউপ পিয়িউপ (Pyiup Pyiup)” আর উড়ন্ত কালে ডাক টা অনেকটা “প্লাট প্লাট” (Plut Plut) শোনায়। আমরা এই পাখিটি একটানা ১০ থেকে ১২ দিন দেখতে পাই এবং সংখ্যাই প্রাই ৫-৭টি। এভাবেই যেন প্রতি বছর আসে ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের এই প্রিয় বান্টিং বা বাংলায় সোনা পাখি।
FACEBOOK LINK : www.facebook.com/mrinmoychocophotography
Lovely
ReplyDeleteThank you for your valuable feedback.
Delete